শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:৪৭ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
অদক্ষ-অনভিজ্ঞ স্টেশন মাস্টারে ঘটছে দুর্ঘটনা

অদক্ষ-অনভিজ্ঞ স্টেশন মাস্টারে ঘটছে দুর্ঘটনা

স্বদেশ ডেস্ক:

স্টেশন পরিচালনার নিয়ম অনুযায়ী একটি গ্রেড-৩ স্টেশনে কমপক্ষে ১২ বছরের অভিজ্ঞ স্টেশন মাস্টার পদায়নের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। নিরাপদ ট্রেন পরিচালনা নিশ্চিত করতে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে মানা হচ্ছে না এসব নিয়ম। ফলে ঘটছে দুর্ঘটনা। এতে রেলের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও বাড়ছে। উঠতি কিছু বিতর্কিত শ্রমিক নেতার তদবিরে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা আর্থিক সুবিধা নিয়ে শিক্ষানবিশ ও সহকারী স্টেশন মাস্টারকে গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনে পদায়নের কারণে অনাকাক্সিক্ষত দুর্ঘটনা এড়ানো যাচ্ছে না। স্টেশন পরিচালনায় এ ধরনের অনিয়ম বন্ধ না হলে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছেন রেলের একাধিক সূত্র। সর্বশেষ গত শনিবার চট্টগ্রামের পাহাড়তলী স্টেশনের কাছে সাগরিকা ট্রেনের ইঞ্জিন লাইনচ্যুত হয়। সম্প্রতি সেখানে একজন শিক্ষানবিশ স্টেশন মাস্টারকে পদায়ন করেছেন বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা। তার ভুলের কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে।

জানা গেছে, বাংলাদেশ রেলওয়ের জেনারেল সাবসিডারি (জিএস) রুলস অনুসারে স্টেশন ওয়ার্কিং রুলস তৈরি করে সে অনুযায়ী স্টেশন পরিচালনা করা হয়। পাহাড়তলী স্টেশন গ্রেড-৩ অর্থাৎ গ্রেড-৩ মাস্টার পদায়ন করতে হবে সেখানে। কিন্তু গত ২২ নভেম্বর এক আদেশে ২০১৯ সালে নিয়োগ পাওয়া সহকারী স্টেশন মাস্টার রাকিবুল ইসলামকে পদায়ন করা হয়। অথচ রুলস অনুযায়ী সেখানে কোনো সহকারী স্টেশন মাস্টার এমনকি গ্রেড-৪ স্টেশন মাস্টার পদায়নের সুযোগ নেই। এসব স্টেশনে ট্রেন পরিচালনা বেশি হওয়ার কারণে অভিজ্ঞ মাস্টার পদায়নের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু ডিটিও স্নেহাশীষ দাশগুপ্ত তা মানেননি।

অভিযোগ রয়েছে, ২২ নভেম্বর ডিটিওর জারি করা আদেশে ২১ জন স্টেশন মাস্টারকে বদলি করা হয়। সেখানে নবিশ ও অনভিজ্ঞদের গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনে পদায়ন করা হয়। গুরুত্বপূর্ণ মেইন লাইন স্টেশন মাস্টারদের বদলি এবং নতুন স্টেশন মাস্টারদের ওপরের পদে পদায়নের কারণে স্টেশন বন্ধের উপক্রম হয়েছে। এরইমধ্যে মহুরীগঞ্জ স্টেশন বন্ধ হয়েছে স্টেশন মাস্টারের অভাবে। অন্যদিকে কম গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনে প্রয়োজনের অধিক পদায়ন করা হয়।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মেইন লাইনের সদর রসুলপুর স্টেশনের সহকারী স্টেশন মাস্টার রাকিবুল ইসলামকে পাহাড়তলী স্টেশনে বদলির কারণে দুজন মাস্টার দিয়ে ওই স্টেশন পরিচালনা অসম্ভব হয়ে পড়ে। ফলে সেটি বন্ধ করে দেওয়ার প্রস্তাব দেন প্রধান মাস্টার প্রসেনজিৎ। স্টেশন বন্ধের বিষয়টি জানালে ডিটিও দুজন দিয়ে কাজ চালিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেন। অন্যথায় তাকে বরখাস্তের হুমকি দেন। কিন্তু প্রসেনজিৎ তার সিদ্ধান্তে অটল থাকায় শেষ পর্যন্ত রাজাপুর স্টেশনের কার্যক্রম ৮ ঘণ্টা বন্ধ রেখে সেখানকার একজন মাস্টারকে সদর রসুলপুরে পাঠালে স্টেশনের অপারেশনে

থাকলেও রাজাপুর স্টেশন বন্ধের উপক্রম হয়েছে। এ ছাড়া রেলের ১৯৮২ সালের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে- কাউকে হয়রানিমূলক বদলি করা যাবে না। অথচ বর্তমান ডিটিও এসবের তোয়াক্কা না করেই ইচ্ছেমতো বদলি করে দিয়েছেন।

জানা গেছে, ২০০৫ সালে চাকরিতে যোগ দেওয়া নীতিশ চাকমা চট্টগ্রাম জংশন কেবিনে দায়িত্ব পালন করছিলেন এসএম গ্রেড-৪ হিসেবে। তিনি হেপাটাইটিজ-বি রোগী হওয়ায় মানবিক কারণে দূরে বদলি করেনি প্রশাসন। বর্তমান আদেশে তাকে কুমিল্লার পর রাজাপুর স্টেশনে পাঠানোর কারণে জীবন ঝুঁকিতে পড়েছেন তিনি। মানবিক বিষয়টি ডিটিওকে অবহিত করলে বদলিকৃত স্টেশনে যোগ না দিলে বরখাস্তের হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অন্যদিকে ২০১৯ সালে যোগ দেওয়া এএসএম রাকিবুল ইসলামকে পাহাড়তলী, আতিকুর রহমানকে মহুরীগঞ্জের রাজাপুর থেকে চট্টগ্রাম জংশন কেবিনে এবং শফিকুল ইসলাম রনিকে কসবা থেকে ফৌজদারহাট স্টেশনে পদায়ন করা হয়েছে। আবার বিধি অনুযায়ী ওপরের পদে দেওয়ার সুযোগ নেই। অন্যদিকে কসবা থেকে ফৌজদারহাট স্টেশন ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় সেখানে সিনিয়র মাস্টার দেওয়া হয়।

রাকিবের দায়িত্ব অবহেলার কারণে পাহাড়তলীর দুর্ঘটনা ঘটেছে স্বীকার করে রেলের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিবহন) সরদার শাহাদাত আলী আমাদের সময়কে বলেন, দায়িত্ব অবহেলার বিষয়টি প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে। তদন্ত কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়া বদলিজনিত কোনো সমস্যা থাকলে তাও খতিয়ে দেখা হবে। অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ডিটিও বলেন, অফিসে আসেন। বিস্তারিত বলব।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877